অনেক দিন পর ট্রেন এ উঠলাম। সেই কবে বাড়িতে গিয়েছিলাম, তার পর প্রায় ৫
বছর বাড়ি যাওয়া হয়নি। আত্মীয়স্বজন থাকলেও কাজের চাপে বাড়ি যাওয়ার কথা
মাথায়ই আসত না। কিন্তু আজ না গেলে খবর আছে। খালাতো বোন অর্নেষার বিয়ে। সকাল সকাল ট্রেনে
চাপার পরপরই একটা গ্রাম্য গ্রাম্য ঘ্রাণ পাচ্ছি।
ট্রেনের ফার্স্ট ক্লাস আসলেই ফার্স্ট ক্লাস। জানালার পাশেই সিট। বাচ্চা ছেলেপেলেদের মত আনন্দ পেলাম। আহা! অপরূপ বাংলা দেখতে দেখতে যেতে পারব। কিন্তু আগে যদি জানতাম জানালার পাশে বসার মজাটা হাত ছাড়া হয়ে যাবে তাহলে ট্রেনেই যেতাম না। কিন্তু কি আর করার? ফরচুন ডাজন্ট ফেভার দা পুরুষ।
কোথা থেকে এক মহীয়সী এসে জানালার পাশের সিটটা দলিলপত্র অর্থাৎ টিকেটসহ আবদার করছেন। একটা সময় ছিল পারলে কোনো লেডিস টেনে এনে পাশের সিটে বসাই, কিন্তু এখন কেমন যেন বিরক্তি লাগছে। সেই বয়স কি আর আছে? একটু পরপরই আড়চোখে তাকাচ্ছে মেয়েটা। অজ্ঞানপার্টির কেউ না তো! অবশ্য অজ্ঞান পার্টির কেউ হলে এভাবে জানালার পাশের সিট দাবী করত না। বরং তেল মারত। ধুর! অচেনা কাওকে নিয়ে এভাবে চিন্তা করাটা ঠিক না। বি পজেটিভ ম্যান!
মেয়েটার চোখে খুব যত্ন করে কাজল দেয়া। এতটা যত্ন করে কাজল দিতে এর আগে একজনকেই দেখেছি। কি ভেবে হাতের দিকে তাকাতেই প্রথম ঝটকা খেলাম। দশ বছরের পুরোনো একটা আংটি। খানিকটা বিপজ্জনকভাবে ঝুঁকে পায়ের দিকেও তাকালাম। মেয়েটার পায়ের দিকে তাকালাম। না না! এটা অসম্ভব!! ও কি আসলেই সাদিয়া। হ্যাঁ সাদিয়াই তো। এরকম ফর্সা পায়ের রং আর অই আংটি সাদিয়া ছাড়া আর কারো হতে পারেনা। রাফিন সবসময় বলত যে সাদিয়া একমাত্র পায়ের রং এর দিক দিয়ে ইউনিক। লজ্জা শরম আর ইগোর মাথা খেয়েই জিজ্ঞেস করলাম,
সাদিয়া???
চিনতে পেরেছ তাহলে। আমি তো ভেবেছিলাম তুমি চিনবে না। না চিনলে আমিও পরিচয় দিতাম না।
তোমাকে তো ভুলে যাইনি যে আলাদা ভাবে চিনতে হবে।
এতদিন পর এভাবে দেখা হওয়াটা আমার কাছে যথেষ্ট আশ্চর্যের খোরাক। এখনও অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে যতবার পাশের সিটে তাকাই ততবারই দশ বছর আগের একটা উঠতি বয়সের আবেগ নাড়া দিয়ে ওঠে। ও আগের মতই চুপচাপ! আমি আগের মতই বাচাল। শুধু সময়টা পাল্টে গেছে। মেয়েটার হাসি আগের মতই আছে। এটাও পাল্টায়নি একটুও। ওর মিষ্টি মুখমন্ডলের মায়াটাও একই আছে। বাচ্চা কাচ্চার কথা জিজ্ঞেস করতেই এড়িয়ে গেল। আমি ভাবছিলাম একই প্রশ্নের সম্মুখীন আমাকেও হতে পারে। হলও তাই। উছিত হয়নি, তাও মোবাইল ঘেঁটে অর্নেষার একটা ছবি দেখালাম। কিন্তু তুমি কি বিশ্বাস করবে সাদিয়া, তোমার পর আর কাওকে স্বপ্ন দেখাইনি।
বেশ খানিকটা আলাপচারিতার পর একটা নিরবতা কাজ করছে আমাদের মধ্যে। কতদিন পর দেখা হলো মেয়েটার সাথে। কেমন যেন জীবনের ভারে নুয়ে পড়েছে। একটু আনন্দের খোঁজ একটু সুখের চাহিদা ওর চোখে মুখে ফুটে উঠেছে। আমি তা স্পষ্ট দেখতে পারছি। আমার চোখে ওর কোনোকিছুই আড়াল থাকে না। হয়ত বিবাহিত জীবনের সুখ একরকম অধরাই রয়ে গেছে ওর কাছে।
তোমার মনে পরে ফেব্রুয়ারির ২৩ তারিখ???
হুমম। ওটা ভুলে যাওয়ার মত না। আমি ভেবেছিলাম তুমি ভুলে গেছ।
তুমি কি করে বুঝলে ভুলে গেছি?
একটা পুরনো স্মৃতি ভুলে যাওয়ার জন্য ১০ বছর যথেষ্ট সময়।
৯/১২/১২ তারিখ টা মনে আছে?
হুমম। সেটাও মনে আছে। জীবনের শেষ স্বপ্নের মৃত্যুবার্ষিকীটা এই ছোট্ট স্মৃতিতে একরকম খোদাই করে আঁকা। কি করে ভুলি বল?
আমি অনেক চেষ্টা করেছিলাম তোমার কাছে ফিরে আসতে। একটিবার ক্ষমা চাওয়া খুব দরকার ছিল তখন। কিন্তু পারিনি। নিজের সাথে যুদ্ধ করতে করতে এতটাই ক্লান্ত হয়ে পরেছিলাম যে একবার তোমার সামনে আসার সুযোগ করতে পারিনি। ভয় পেতাম। যদি তুমি আমাকে ফিরিয়ে দাও।
যদি ফিরিয়ে না দিতাম. . . .
অদিত, এত বড়স্বপ্ন দেখতে তখন ভয় পেতাম। অজানা আশংকা কাজ করতো।
সাদিয়ার গলা ধরে এসেছে। ওর চোখের জল আমার কাছে অসম্ভব যন্ত্রনাদায়ক। একটা সিগারেট খুব দরকার। কিন্তু ওর শেষ ইচ্ছা ছিল আমি যাতে সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দেই। আমি পারিনি সাদিয়া। তবে আজ খাব না। তোমাকে আর কষ্ট দিতে চাইনা।
একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
কি?
তুমি কি আসলে সুখী হতে পেরেছ?
এবার সাদিয়া হুহু করে করে কেঁদে উঠলো। ওর প্রতি আমার টান টা যে কতোখানি গভীর তা এতক্ষণে বুঝলাম। আমার কি করা উচিত বুঝতে পারছি না। কাঁদুক। কান্না টা ওর খুব জরুরি। ওকে হয়ত সান্তনা ছাড়া দেওয়ার মত আর কিছু নেই। আমি আবারো নিরব।
দেখতে দেখতে কিভাবে সময় কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না। সাদিয়া এখন অনেকটাই শান্ত। সময় ফুরিয়ে এসেছে। এখানেই আমাকে নেমে যেতে হবে। এর বেশিক্ষণ থাকার অধিকার আমার নেই।
ট্রেন থেকে নেমে একটিবারও পিছনে ফিরে তাকালাম না। তাকালে হয়ত সাদিয়ার জীবনযুদ্ধে পরাজিত মুখটাই দেখতে হত। কিন্তু আমি আমার সাদিয়া কে সবসময় হাসিখুশি দেখতে চেয়েছিলাম। বাস্তবে সব চাওয়া পূরণ হয়না। আমাদের দুজনের চাওয়া একই ছিল। কিন্তু তা পূরণ হয়নি। ভালো থেকো সাদিয়া। আমি তোমার বিষন্ন মুখটা আর দেখতে চাইনা। তোমার জন্য শুভকামনা রইলো। যদি কখনো ফিরে আসতে চাও আমার দরজা তোমার জন্য সবসময় খোলা থাকবে। সব বন্ধন যদি ছিন্ন করে ফিরে আসতে পারো তবে ফিরে এসো। আমার বিয়ে করার মিথ্যে টা না বললেও পারতাম। কিন্তু সবসময় সব সত্যি বলতে হয়না। আপাতত নাহয় তোমার ফিরে আসার অপেক্ষায় রইলাম।
ট্রেনের ফার্স্ট ক্লাস আসলেই ফার্স্ট ক্লাস। জানালার পাশেই সিট। বাচ্চা ছেলেপেলেদের মত আনন্দ পেলাম। আহা! অপরূপ বাংলা দেখতে দেখতে যেতে পারব। কিন্তু আগে যদি জানতাম জানালার পাশে বসার মজাটা হাত ছাড়া হয়ে যাবে তাহলে ট্রেনেই যেতাম না। কিন্তু কি আর করার? ফরচুন ডাজন্ট ফেভার দা পুরুষ।
কোথা থেকে এক মহীয়সী এসে জানালার পাশের সিটটা দলিলপত্র অর্থাৎ টিকেটসহ আবদার করছেন। একটা সময় ছিল পারলে কোনো লেডিস টেনে এনে পাশের সিটে বসাই, কিন্তু এখন কেমন যেন বিরক্তি লাগছে। সেই বয়স কি আর আছে? একটু পরপরই আড়চোখে তাকাচ্ছে মেয়েটা। অজ্ঞানপার্টির কেউ না তো! অবশ্য অজ্ঞান পার্টির কেউ হলে এভাবে জানালার পাশের সিট দাবী করত না। বরং তেল মারত। ধুর! অচেনা কাওকে নিয়ে এভাবে চিন্তা করাটা ঠিক না। বি পজেটিভ ম্যান!
মেয়েটার চোখে খুব যত্ন করে কাজল দেয়া। এতটা যত্ন করে কাজল দিতে এর আগে একজনকেই দেখেছি। কি ভেবে হাতের দিকে তাকাতেই প্রথম ঝটকা খেলাম। দশ বছরের পুরোনো একটা আংটি। খানিকটা বিপজ্জনকভাবে ঝুঁকে পায়ের দিকেও তাকালাম। মেয়েটার পায়ের দিকে তাকালাম। না না! এটা অসম্ভব!! ও কি আসলেই সাদিয়া। হ্যাঁ সাদিয়াই তো। এরকম ফর্সা পায়ের রং আর অই আংটি সাদিয়া ছাড়া আর কারো হতে পারেনা। রাফিন সবসময় বলত যে সাদিয়া একমাত্র পায়ের রং এর দিক দিয়ে ইউনিক। লজ্জা শরম আর ইগোর মাথা খেয়েই জিজ্ঞেস করলাম,
সাদিয়া???
চিনতে পেরেছ তাহলে। আমি তো ভেবেছিলাম তুমি চিনবে না। না চিনলে আমিও পরিচয় দিতাম না।
তোমাকে তো ভুলে যাইনি যে আলাদা ভাবে চিনতে হবে।
এতদিন পর এভাবে দেখা হওয়াটা আমার কাছে যথেষ্ট আশ্চর্যের খোরাক। এখনও অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে যতবার পাশের সিটে তাকাই ততবারই দশ বছর আগের একটা উঠতি বয়সের আবেগ নাড়া দিয়ে ওঠে। ও আগের মতই চুপচাপ! আমি আগের মতই বাচাল। শুধু সময়টা পাল্টে গেছে। মেয়েটার হাসি আগের মতই আছে। এটাও পাল্টায়নি একটুও। ওর মিষ্টি মুখমন্ডলের মায়াটাও একই আছে। বাচ্চা কাচ্চার কথা জিজ্ঞেস করতেই এড়িয়ে গেল। আমি ভাবছিলাম একই প্রশ্নের সম্মুখীন আমাকেও হতে পারে। হলও তাই। উছিত হয়নি, তাও মোবাইল ঘেঁটে অর্নেষার একটা ছবি দেখালাম। কিন্তু তুমি কি বিশ্বাস করবে সাদিয়া, তোমার পর আর কাওকে স্বপ্ন দেখাইনি।
বেশ খানিকটা আলাপচারিতার পর একটা নিরবতা কাজ করছে আমাদের মধ্যে। কতদিন পর দেখা হলো মেয়েটার সাথে। কেমন যেন জীবনের ভারে নুয়ে পড়েছে। একটু আনন্দের খোঁজ একটু সুখের চাহিদা ওর চোখে মুখে ফুটে উঠেছে। আমি তা স্পষ্ট দেখতে পারছি। আমার চোখে ওর কোনোকিছুই আড়াল থাকে না। হয়ত বিবাহিত জীবনের সুখ একরকম অধরাই রয়ে গেছে ওর কাছে।
তোমার মনে পরে ফেব্রুয়ারির ২৩ তারিখ???
হুমম। ওটা ভুলে যাওয়ার মত না। আমি ভেবেছিলাম তুমি ভুলে গেছ।
তুমি কি করে বুঝলে ভুলে গেছি?
একটা পুরনো স্মৃতি ভুলে যাওয়ার জন্য ১০ বছর যথেষ্ট সময়।
৯/১২/১২ তারিখ টা মনে আছে?
হুমম। সেটাও মনে আছে। জীবনের শেষ স্বপ্নের মৃত্যুবার্ষিকীটা এই ছোট্ট স্মৃতিতে একরকম খোদাই করে আঁকা। কি করে ভুলি বল?
আমি অনেক চেষ্টা করেছিলাম তোমার কাছে ফিরে আসতে। একটিবার ক্ষমা চাওয়া খুব দরকার ছিল তখন। কিন্তু পারিনি। নিজের সাথে যুদ্ধ করতে করতে এতটাই ক্লান্ত হয়ে পরেছিলাম যে একবার তোমার সামনে আসার সুযোগ করতে পারিনি। ভয় পেতাম। যদি তুমি আমাকে ফিরিয়ে দাও।
যদি ফিরিয়ে না দিতাম. . . .
অদিত, এত বড়স্বপ্ন দেখতে তখন ভয় পেতাম। অজানা আশংকা কাজ করতো।
সাদিয়ার গলা ধরে এসেছে। ওর চোখের জল আমার কাছে অসম্ভব যন্ত্রনাদায়ক। একটা সিগারেট খুব দরকার। কিন্তু ওর শেষ ইচ্ছা ছিল আমি যাতে সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দেই। আমি পারিনি সাদিয়া। তবে আজ খাব না। তোমাকে আর কষ্ট দিতে চাইনা।
একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
কি?
তুমি কি আসলে সুখী হতে পেরেছ?
এবার সাদিয়া হুহু করে করে কেঁদে উঠলো। ওর প্রতি আমার টান টা যে কতোখানি গভীর তা এতক্ষণে বুঝলাম। আমার কি করা উচিত বুঝতে পারছি না। কাঁদুক। কান্না টা ওর খুব জরুরি। ওকে হয়ত সান্তনা ছাড়া দেওয়ার মত আর কিছু নেই। আমি আবারো নিরব।
দেখতে দেখতে কিভাবে সময় কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না। সাদিয়া এখন অনেকটাই শান্ত। সময় ফুরিয়ে এসেছে। এখানেই আমাকে নেমে যেতে হবে। এর বেশিক্ষণ থাকার অধিকার আমার নেই।
ট্রেন থেকে নেমে একটিবারও পিছনে ফিরে তাকালাম না। তাকালে হয়ত সাদিয়ার জীবনযুদ্ধে পরাজিত মুখটাই দেখতে হত। কিন্তু আমি আমার সাদিয়া কে সবসময় হাসিখুশি দেখতে চেয়েছিলাম। বাস্তবে সব চাওয়া পূরণ হয়না। আমাদের দুজনের চাওয়া একই ছিল। কিন্তু তা পূরণ হয়নি। ভালো থেকো সাদিয়া। আমি তোমার বিষন্ন মুখটা আর দেখতে চাইনা। তোমার জন্য শুভকামনা রইলো। যদি কখনো ফিরে আসতে চাও আমার দরজা তোমার জন্য সবসময় খোলা থাকবে। সব বন্ধন যদি ছিন্ন করে ফিরে আসতে পারো তবে ফিরে এসো। আমার বিয়ে করার মিথ্যে টা না বললেও পারতাম। কিন্তু সবসময় সব সত্যি বলতে হয়না। আপাতত নাহয় তোমার ফিরে আসার অপেক্ষায় রইলাম।
